শ্রীমদ্ভগবৎ গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
যখনই পৃথিবীতে অধর্মের প্রাদুর্ভাবে ভক্তের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, দুরাচারীর অত্যাচার ও নিপীড়নে, তখন ধর্ম সংস্থাপনের জন্য কৃপা করে ভক্তের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ঈশ্বর ‘অবতার’ রূপ নিয়ে থাকেন।
তখন তিনি ষড়গুণ যথা- ঐশ্বর্য, বীর্য, তেজ, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্যসম্পন্ন ‘পূর্ণাবতাররূপে’ প্রকাশিত হন। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে আরও বলেছেন, ‘আমি জন্মহীন, অব্যয় আত্মা, ভূতগণের ঈশ্বর (শাসক, নিয়ন্তা স্রষ্টা) হয়েও নিজ প্রকৃতিকে (অনির্বচনীয় মায়াশক্তিকে) আশ্রয় করে আত্মমায়ায় জন্মগ্রহণ করি।
পুরাণে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ধরাভারহরণ, অসুর-নিধনাদি নামে অভিহিত করা হয়েছে।
জন্ম অষ্টমীর আবির্ভাবঃ-
দ্বাপরের যুগ সন্ধিক্ষণে রোহিণী নক্ষত্রে অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব এ মাটির পৃথিবীতে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাকে কেন্দ্র করেই জন্মাষ্টমী উৎসব পালিত হয় বিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে। ওই সময় অসুররূপী রাজশক্তির দাপটে পৃথিবী হয়ে উঠেছিল ম্রিয়মাণ, ধর্ম ও ধার্মিকেরা অসহায় সংকটাপন্ন অবস্থায় ছিলেন। অসহায় বসুমতি পরিত্রাণের জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মার পরামর্শে দেবতারা মিলে যান দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে। সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের যুগসন্ধিক্ষণে তারা বিষ্ণুর বন্দনা করেন।
স্বয়ং বিষ্ণু মহাদেবের কঠোর তপস্যায় মগ্ন হন। এরপর অভয়বাণী শুনিয়ে বলেন, তিনি অচিরেই মানবরূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হবেন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানরূপে শঙ্খ চক্র, গদা, পদ্মধারী শ্রীকৃষ্ণ নামে। ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের নির্দেশ দিলেন ধরাধামে তার লীলা সহচর হিসেবে জন্ম নিতে। ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশমতো দেবতারা নিজেদের পত্নীসহ ভগবানের কাঙ্ক্ষিত কর্মে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে যদুকুলে বিভিন্ন পরিবারে জন্ম নেন। এভাবে ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য দেবতাগণ মর্ত্যলোকে অবতরণ করেন।
উপস্থিত হয় কাঙ্ক্ষিত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ভাদ্র মাসের অষ্টমী তিথি। মধ্যরাত্রির নিবিড় অন্ধকারে ভুবন আবৃত। সবাই গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। এরকম সময়ে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মধারী, চতুর্ভুজ মূর্তিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসের কারাগারে আবির্ভূত হন। বসুদেব দেবকী বিস্ময় বিস্ফোরিত চোখে প্রত্যক্ষ করেন শ্রীভগবানের সেই জ্যোতির্ময় আবির্ভাব। আবির্ভূত দেবকী-বসুদেব নয়নভরে দেখেন অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত মনোহর শিশুটিকে-চতুর্ভুজ, বর্ণমালা পরিহিত অবস্থায়। সর্ব অঙ্গে বহুমূল্য বলয়, বক্ষে শ্রী বৎস চিহ্ন, সারা অঙ্গে মণিমুক্তাখচিত বহু মূল্যবান অলংকারাদি।
ভগবানের আবির্ভাবের ক্ষণটিও সর্বসুলক্ষণযুক্ত, ঐশ্বর্যমণ্ডিত তাৎপর্যে উদ্ভাসিত। শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব লীলা সত্যিই অপূর্ব সুশোভামণ্ডিত, তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন, শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বসুদেব যশোদার গৃহে নিয়ে যান তখন ছিল ঝড়বৃষ্টি। অঝোর বারিধারার সিঞ্চন থেকে শ্রীকৃষ্ণকে বাঁচাতে অনন্তদেব এসে ফণা বিস্তার করে চক্রধারণ করেন। ভরা ভাদ্রের প্রমত্তা যমুনাও কৃষ্ণ গমনের পথ সুগম করে দেন। এসবই শ্রীকৃষ্ণের অলৌকিক ঐশ্বর্যের প্রকাশ।
যুক্তিবাদীরা এসবকে অবিশ্বাস্য কল্পনাবিলাস বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেও ভক্তের হৃদয় যতই চিন্ময়ের দিকে অগ্রসর হয় ততই এসব মধুর শাশ্বত লীলাভক্তের হৃদয়ে সত্যরূপে উদ্ভাসিত হতে থাকে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় উল্লেখ আছে, যিনি যেভাবে তাকে ভজন করেন, ভগবান সেভাবেই তাকে অনুগ্রহ করেন। তাই কংসের কারাগারে দেবকী-বসুদেবের সম্মুখে শ্রীকৃষ্ণ চতুর্ভুজ শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মধারী, আর নন্দালয়ে তিনি পূর্ণ অবতারস্বরূপ দ্বিভুজ মূর্তিতে উপস্থিত। ঐশ্বর্যলেশহীন বাৎসল্য প্রেমে নন্দালয়ে শ্রীকৃষ্ণের অভিষেক হয় সাধারণ মানবিক পরিবেশে।
সনাতন ধর্মে শ্রীকৃষ্ণ সর্বব্যাপী। ধর্মে, অনুষ্ঠানে, আচারে, জীবন পরিচালনায় শ্রীকৃষ্ণ ভিন্ন জীবন অচল। এমন একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী পাওয়া যাবে না, যিনি শ্রীকৃষ্ণ অনুরাগী নন। শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর, মানুষের প্রয়োজনে দেহ ধারণ করেছেন। মানুষের মাঝে আদর্শ পুরুষের প্রতীকস্বরূপ তার জীবন বহুবার বিধৃত হয়েছে। এবং এভাবেই অসুর নিধন করে মানবকুলকে রক্ষা করেছেন।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ জন্মাষ্টমী???
অত্যাচারী রাজা কংসের রাজত্বে মথুরাবাসীর দুঃখের সীমা ছিল না। বোন দেবকীর সঙ্গে বাসুদেবের বিয়ের সময় আকাশ ভেঙে শোনা যায় দৈববাণী। দেবকীর অষ্টম গর্ভে জন্মানো সন্তান কংসকে হত্যা করে উদ্ধার করবে মথুরাবাসীকে। দৈববাণী শুনে দেবকী, বাসুদেবকে সেই মুহূর্তেই কারাগারে বন্ধ করেন কংস।
দ্বাপর যুগে মর্ত্যে আবির্ভাব বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের। কারাগারে দেবকীর ষষ্ঠ সন্তানকেও বাসুদেব কারাগারে হত্যা করার পর সপ্তম সন্তান মারা যায় গর্ভেই। কথিত আছে এই সপ্তম সন্তানই বৃন্দাবনে রোহিনীর গর্ভে বলরাম রূপে জন্মগ্রহণ করেন। অষ্টম গর্ভে কৃষ্ণের জন্মের পর বাসুদেব দেবানুকূল্যে শ্রাবণের ঝড়, বৃষ্টি কবলিত রাতে শিশু কৃষ্ণকে বৃন্দাবনে নন্দরাজ, যশোদার কাছে দিয়ে আসেন। কৃষ্ণকে মাথায় নিয়ে যমুনা পারপারের সময় শেষনাগ শিশু কৃষ্ণকে রক্ষা করেন দুর্যোগের হাত থেকে।
বৃন্দাবনে যশোদার সদ্যোজাতের সঙ্গে কৃষ্ণকে বদলে দিয়ে আসেন। দেবকীর কোলে যশোদার সদ্যোজতকে দেখে কংস তাকে বধ করতে উদ্যত হলে শূন্যে মা দুর্গার রূপ ধারণ করেন সেই সদ্যোজাত কন্যা। শোনা যায় দৈববাণী, কংসকে হত্যা করে মথুরাবাসীকে উদ্ধার করতে কৃষ্ণ পৃথিবীকে আবির্ভূত হয়েছেন।
অষ্টম গর্ভ অর্থ কি?
অষ্টম অর্থ আমরা আটকে বুঝি । আট একটা সংখ্যা, এখানে আট সংখ্যাটা এসেছে আট প্রকার প্রকৃতি থেকে। সেগুলো হচ্ছে -আকাশ,বায়ু, অগ্নি, জল, মাটি ,মন, বুদ্ধি, অহংকার এই আট প্রকার প্রকৃতি ।
আর গর্ভ= গ– র– ভ।
গ— এসেছে গঠন থেকে অর্থাৎ গঠিত করা।
র— এসেছে রত থেকে অর্থাৎ যুক্ত থাকা।
ভ— এসেছে ভূ থেকে অর্থাৎ পৃথিবী।
অষ্টম গর্ভের মূল অর্থ হচ্ছে যিনি এই আট প্রকার পকৃতি দ্বারা মহাবিশ্ব গঠনে যুক্ত ( রত) থাকেন ।
কে এই মহাবিশ্ব আট প্রকার প্রকৃতি দ্বারা গঠনে রত থাকেন? তিনি হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণ। তাই থাকে অষ্টম গর্ভ বলা হয়। শত্রুর কারাগারে জম্ম নেয়া, শিশুকাল হতে অসুরের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ করা, সত্যধর্ম সংস্থাপনের পথ প্রদর্শক, সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জীবন দর্শন প্রদানকারী পরম পুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জম্ম তিথিতে জানাই শ্রীকৃষ্ণ প্রীতি নমস্কার।
সমাজ, সংসার, ধরাধামে যখন যখন অধর্ম আর অসুরের উৎপাত বৃদ্ধি পাবে তখন তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নব নব রুপে আবির্ভূত হয়ে অধর্ম আর অসুরের বিনাশ করে ধর্ম সংস্থাপন করবে এটাই আমার বিশ্বাস।
ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।
বিশ্বমানবের মঙ্গলকামনায় দেশ ও জাতির মঙ্গলার্থে
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫,২৪৬ তম জন্মাষ্টমীর শুভ আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে সকলকে জানাই পবিত্র জম্মাষ্টমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
সকল হিংসা বিদ্বেষ, দুঃখ, জ্বরা, ব্যাধি দূর হোক। সকলের মাঝে জ্ঞানের আলোক শিখা প্রজ্জলিত হোক।
ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।
No comments:
Post a Comment
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.