মে
থেকে সেপ্টেম্বর মাস, বিশেষ করে গরম ও বর্ষার সময় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ
বেশি থাকে। এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে ডেঙ্গু জ্বর বেশি হচ্ছে।
শীতকালে সাধারণত এই জ্বর হয় না বললেই চলে। শীতে লার্ভা অবস্থায় এই মশা অনেক
দিন বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষার শুরুতে সেগুলো থেকে নতুন করে ডেঙ্গু
ভাইরাসবাহিত মশা বিস্তার লাভ করে।
ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু
ভাইরাসের মাধ্যমে এবং এই ভাইরাসবাহিত এডিস ইজিপ্টাই নামক মশার কামড়ে হয়ে
থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি
চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এবার এই আক্রান্ত
ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের
জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু
ছড়িয়ে থাকে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, এই জ্বর এমনিতেই
ভালো হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে এটি শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করে। তবে জ্বরে
আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে কয়েক দিনেই ডেঙ্গু
পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।
More Read: রাতে ভাত না রুটি, কোনটা কতটুকু খাওয়া উচিৎ?
লক্ষণ
ডেঙ্গু
জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর এবং সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫
ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও
মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। জ্বর
হওয়ার চার বা পাঁচ দিনের সময় সারা শরীরে লালচে দানা দেখা যায়। যাকে বলা হয়
স্কিন র্যা শ, অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব
এমনকি বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়। এই
অবস্থাটা যেকোনো সময় জটিল হয়ে উঠতে পারে। যেমন অন্য সমস্যার পাশাপাশি যদি
শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন: চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ
দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সঙ্গে, রক্ত বমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত
বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে ও চোখের বাইরে রক্ত পড়তে পারে।
মেয়েদের
বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেক দিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে
থাকা ইত্যাদি হতে পারে। এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি
ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস,
কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
* শরীরের যেকোনো অংশে রক্তপাত হলে
* প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে
* শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি এলে
* প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে
* জন্ডিস দেখা দিলে
* অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে
* প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।
চিকিৎসা
ডেঙ্গু
জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই
ভালো হয়ে যায়। এমনকি কোনো চিকিৎসা না করালেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের
পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে। যাতে ডেঙ্গুজনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়।
ডেঙ্গু জ্বরটা আসলে গোলমেলে রোগ, সাধারণত লক্ষণ বুঝেই চিকিৎসা দেওয়া হয়।
* সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে।
* যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল-জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
* খেতে না পারলে দরকার হলে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে।
*
জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল-জাতীয় ব্যথার ওষুধই যথেষ্ট। এসপিরিন
বা ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ব্যথার ওষুধ কোনোক্রমেই খাওয়া যাবে না। এতে
রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে।
* জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছাতে হবে।
প্রতিরোধ
ডেঙ্গু
জ্বর প্রতিরোধের মূল মন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন
কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এরা ডিম পাড়ে।
ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এদের পছন্দসই নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে
এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সঙ্গে
মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
* বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
*
যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে, যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে
থাকে। তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোলা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি
সরিয়ে ফেলতে হবে।
* ঘরের বাথরুমে বা কোথাও জমানো পানি পাঁচ দিনের বেশি
যেন না থাকে। অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারের নিচেও যেন পানি জমে
না থাকে।
* এডিস মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য কোনো
সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীরে ভালোভাবে কাপড় দিয়ে ঢেকে বের হতে
হবে, প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের দরজা-জানালায়
নেট লাগাতে হবে।
* দিনের বেলায় মশারি টানিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।
* বাচ্চাদের যারা স্কুলে যায়, তাদের হাফ প্যান্ট না পরিয়ে ফুল প্যান্ট পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে।
* মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
* ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে করে কোনো মশা কামড়াতে না পারে।
*
ডেঙ্গু জ্বরের মশাটি এ দেশে আগেও ছিল, এখনো আছে। মশা প্রজননের ও
বংশবৃদ্ধির পরিবেশও আছে। তাই একমাত্র সচেতনতা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই এর হাত
থেকে বাঁচা সম্ভব।
Source of: Prothom Alo
#ডেঙ্গু জ্বরহলেকিখেতেহবে, #জ্বরকতদিনথাকে, #জ্বরওপ্রতিকার, #রোগেরলক্ষণ২০২০, #ডেঙ্গুরোগেরচিকিৎসা, #ডেঙ্গুরোগেরলক্ষণ২০২১, #ডেঙ্গুরোগীরখাবার, #ডেঙ্গুজ্বরকি
No comments:
Post a Comment
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.