গাজর |
গাজর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অবশ্যই আপনার জানা উচিত, কারণ গাজরকে বলা হয় সুপার ফুড। খাদ্য উপাদান গুলোর মধ্যে এটি খুব শক্তিশালী। গাজর এক প্রকার সবজি। প্রায় সব দেশেই গাজর প্রচলিত আছে। তবে এশিয়া মহাদেশ গুলোতে যতেষ্ট পরিমাণে গাজর খাওয়া হয়। কারণ পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক গাজরই চীন দেশে উৎপাদিত হয়। বিভিন্ন উপায়ে গাজর খাওয়া যায়। যেমন – নান্না করে খাওয়া যায়, বিভিন্ন জুস বানিয়ে খাওয়া হয় এবং সবচেয়ে বেশি সালাদে এর ব্যবহার ব্যাপক রয়েছে।
আমরা অনেকেই গাজর বেশি খায় না। কারণ গাজর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না, এবং গাজরে কি পরিমাণ পুষ্টিগুণ আছে তাঁর ব্যাপারেও বেশি ধারণা নেই? গাজরে রয়েছে শক্তি, শর্করা, চিনি, খাদ্যে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিনসমূহ ভিটামিন এ সমতুল্য, বেটা ক্যারোটিন, লুটিন জিজানথেন, থায়ামিন (বি১), রিবোফ্লাভিন (বি২), ন্যায়েসেন (বি৪প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (বি৯), ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, চিহ্ন ধাতুসমুহ, ক্যালসিয়াম, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম , ম্যাঙ্গানিজ , ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম। এইজন্যই এটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবারের মধ্যে অন্যতম।
এখানে আপনি গাজর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন বিস্তারিত ও কার্যকরী তথ্যসহ। তাহলে দেখেনিন এই সুপার ফুডের শক্তি কত!
More Read: হার্টকে ভালো রাখে ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে রসুন
গাজরের ১০টি উপকারিতা
০১। শরীরে শক্তি যোগায়।
০২। চোখের দৃষ্টি ভালো রাখে।
০৩। হার্ট সুস্থ ও সচল রাখে।
০৪। হাড় ভালো ও মজবুত রাখে।
০৫। উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
০৬। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
০৭। ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখে।
০৮। দাঁত ভালো ও পরিষ্কার রাখে।
০৯। হৃদরোগ ও স্টোকের ঝুঁকি কমায়।
১০। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।০১। শরীরে শক্তি যোগায়।
গাজরকে একটি শক্তিশালী সবজি বলা হয়। এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, শক্তি ১৭৩ কিজু, শর্করা, ৯.৬ মি. গ্রা. ক্যালসিয়াম, প্রোটিনসহ আরও অনেক কার্যকারী উপাদান। যা শরীরে শক্তি যোগাতে যতেষ্ট ভূমিকা রাখে এবং শরীরের দুর্বলতা হ্রাস করে। গাজর রান্না করেও করে খাওয়া যায় এবং কাঁচা সালাদ বানিয়ে ও খাওয়া যায়। যেইভাবেই হোক নিয়মিত যদি এটি খেতে পারেন। তাহলে শরীরের যে ক্লান্তিভাব আসে, দুর্বলতা দেখা, এইগুলো এক নিমিষেই চলে যাবে এবং ধীরে ধীরে শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ফলে যেকোনো কাজ মনোযোগ দিয়ে করা যাবে ও যতেষ্ট ধৈর্য ও শক্তি পাওয়া যাবে।
০২। চোখের দৃষ্টি ভালো রাখে।
গাজর খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম হচ্ছে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। যদি এইভাবে প্রশ্ন করা হয়- চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে চান? তাহলে উত্তর আসবে- নিয়মিত গাজর খেতে পারেন। গাজরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সমস্যা থেকে বাঁচায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বেটা ক্যারোটিন, যা লিভারে গিয়ে পরবর্তীতে ভিটামিন এ তে রূপান্তর হয়। বেটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি চোখের অন্যান্য সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, রাতকানা রোগ ইত্যাদির মতো সমস্যায় বাধা দেয়। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে চোখ সুস্থ, সবল ও ভালো রাখতে চাইলে, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে চাইলে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা খুব সহজেই দূর করতে চাইলে নিয়মিত গাজর খাওয়ার বিকল্প কিছু নেই।
০৩। হার্ট সুস্থ ও সচল রাখে।
হার্ট সুস্থ ও সচল রাখতে গাজরের ভূমিকা অনন্য। যদি আপনি শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকতে পারেন, পর্যাপ্ত ঘুম এবং চাপ মুক্ত থাকেন, তাহলেই আপনার হার্ট সুস্থ থাকবে। এইগুলোর জন্যই আপনাকে নানান স্বাস্থ্যকর বা পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার খাওয়া উচিত। এবং সেগুলোর মধ্যে গাজর অন্যতম। কারণ এতে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন‚ আলফা ক্যারোটিন এবং লুটিন জিজানথেন ( এগুলো সবই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ) যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এই উপাদান গুলো ধমনির ওপর কোনো কিছুর আস্তরণ জমতে না দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, যা খুব সহজেই হার্টকে সুস্থ রাখে। তাই খুব সহজেই হার্ট ভালো রাখতে ছোট বড় সবার গাজর খাওয়া আবশ্যক।
০৪। হাড় ভালো ও মজবুত রাখে।
বর্তমানে হাড়ের রোগী অনেক দেখা যাচ্ছে। হাড় দুর্বল হয়ে পরা, স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে না পারা, রাতে ঘুমাতে গেলে পা ব্যথা করা আরও নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও স্নেহ পদার্থ, ও ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম হাড় সুস্থ ও মজবুত করতে যতেষ্ট পরিমাণে সহায়তা করে। একটি গাজরে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য উপাদান, যার ফলে নিয়মিত ১/২ টি কাঁচা অথবা সালাদ বানিয়ে খেলে হাড় ভালো ও মজবুত থাকে।
০৫। উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি গাজর ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ প্রায়শই আমাদের মধ্যে দেখা দেয়, তারজন্য আমরা ভয় পেয়ে যাই এবং প্রাথমিক অবস্থায়ই ডাক্তারের কাছে চলে যায়। কিন্ত প্রাথমিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য গাজর খেতে পারেন। অর্থাৎ গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। তাই যাদের এই সমস্যা আছে প্রতিদিন ১/২ টি করে গাজর খেতে দিন, যতেষ্ট উপকার পাবেন। তাছাড়া শরীর স্বাস্থ্য ও ভালো থাকবে।
০৬। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে গাজরও যতেষ্ট ভূমিকা রাখে। এর রয়েছে নানান উপাদান যা বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। হজমের পর খাদ্যের কিছু উচ্ছিষ্ট আমাদের শরীরে থেকে যায়। যাকে ফ্রি র্যাডিকেলস বা মৌল বলে, এই ফ্রি র্যাডিকেলস শরীরের কিছু কোষ নষ্ট করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার এই ধরনের মৌলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। শরীরে ক্যানসারের কোষ উৎপাদন কম হয়। ফলে নিয়মিত কাঁচা ১/২ টা অথবা সালাদ বানিয়ে গাজর খেলে ব্রেস্ট, কোলন ও ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি কম থাকে। তাই সবারই উচিত নিয়মিত গাজর খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা।
০৭। ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখে।
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য রয়েছে কিছু বিশেষ খাবার যা ত্বককে খুব সহজেই সুস্থ, সুন্দর ও কোমল করে। তাঁরমধ্যে গাজর অতুলনীয় ভূমিকা রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়ামের মতো আরও কিছু খনিজের উপস্থিতি আছে গাজরে। এই উপাদানগুলো ত্বককে রাখে সুস্থ এবং সতেজ, এসব পুষ্টি উপাদান ত্বক শুকিয়ে যাওয়া, স্কিন টোনকে উন্নত করা এবং ত্বকে বিভিন্ন দাগ পড়া থেকে রক্ষা করে। যদি আপনার ত্বক সুস্থ ও সতেজ রাখতে চান, সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত গাজর খেতে পারেন, ভালো উপকার পাবেন।
০৮। দাঁত ভালো ও পরিষ্কার রাখে।
সুস্থ, সুন্দর ও সাদা দাঁত চান, তাহলে যত্নের পাশাপাশি নিয়মিত খাজর খাওয়া শুরু করুন। তবে কাঁচা গাজর খেলে পারলে দাঁত ভালো ও পরিষ্কার রাখে। আপেল ও পেয়ারার পাশাপাশি এটিও দাঁতের মাড়ি শক্ত ও মজবুত করে। গাজর খুব সহজেই মুখের প্ল্যাক ও জমে থাকা বিভিন্ন খাবারের উপাদান মুখ থেকে দূর করে। এতে রয়েছে অনেক ধরনের কার্যকরী উপাদান এবং এছাড়াও এর মিনারেল গুলো দাঁত সুন্দর ও সাদা এবং দাঁতের মাড়ি মজবুত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই সবার নিয়মিত ১/২ টা গাজর বিশেষ করে কাঁচা খাওয়া উচিত।
০৯। হৃদরোগ ও স্টোকের ঝুঁকি কমায়।
নিয়মিত গাজর খেলে হৃদরোগ ও স্টোকের ঝুঁকি কমে যাবে। অর্থাৎ এটি হৃৎপিণ্ডের নানা অসুখে খুব ভাল কাজ করে। এর ক্যারোটিনয়েড গুলো হৃৎপিণ্ডের নানা অসুখের যতেষ্ট কার্যকারী ওষুধ হিসেবে কাজ করে। যেসব খাবারে উচ্চমাত্রাই এই উপাদান পাওয়া যায় সেসব খেলে হৃদরোগ ও স্টোকের ঝুঁকি যতেষ্ট পরিমাণে কমে আসবে। তাই মধ্যে এই রোগের প্রবণতা দেখা দেয়, তাদের উচিত গাজর খাওয়ার অভ্যাস করা, এইটা অনেকখানি উপকার করবে।
১০। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
উপরোক্ত উপকার গুলো ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্যর হাত থেকে রক্ষা করে, গাজরের ফাইবার কোলন পরিষ্কার রাখে, এটি ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে, গাজরের ভিটামিন ও মিনারেলস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, সর্দি-ঠাণ্ডা ও কাশি থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে, বয়সের ছাপ দূর করে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে ও সহায়তা করে থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, একটা সামান্য গাজর যা আমরা অনেকেই খাই না, আর খেলেও সবসময় না মাঝে মাঝে এবং সেটির গুণাগুণ কত রয়েছে। গাজর দামে সস্থা ও যদি ও শীতকালীন সবজি কিন্ত বাজারে সবসময় পাবেন। কাঁচা বা সালাদ অথবা রান্না করেও খেতে পারেন। বাড়তি বয়সের ছেলে-মেয়েদের এখনই সময় নিয়মিত গাজর খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা।
Source of: Online
#গাজরেরউপকারিতাওঅপকারিতা, #গাজরএরউপকারিতা, #গাজরেরজুসেরউপকারিতা, #শসারউপকারিতাওঅপকারিতা, #গাজরেরহালুয়াউপকারিতা, #খালিপেটেগাজরখাওয়ারউপকারিতা, #প্রতিদিনগাজর খাওয়ারউপকারিতা, #গাজরেরপুষ্টিগুণ,
No comments:
Post a Comment
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.