*ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই ত্রিজগতে কোনো কর্তব্য নেই, তাঁর কোনো কিছু অপ্রাপ্ত নেই এবং প্রাপ্তব্যও নেই; তবুও তিনি কেন কর্ম করেন?
উঃ ভগবান কর্ম না করলে তাঁর অনুবর্তী হয়ে সমস্ত মানুষ কর্ম ত্যাগ করবে-- এইভাবে তারা উচ্ছন্নে যাবে। সেজন্য তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য ভগবান স্বয়ং কর্ম করে থাকেন।
* মানুষ সব সময় অহংকারবশতঃ সব কার্যের নিজেকে কর্তা বলে মনে করে কিন্তু আসলে সমস্ত কার্য কার প্রভাবে সংঘটিত হয়?
উঃ জড়া প্রকৃতির ত্রিগুণ দ্বারা সমস্ত কার্য সম্পাদিত হয়। কিন্তু মোহাচ্ছন্ন হয়ে জীব প্রাকৃত অহংকারবশতঃ নিজেকে কর্তা বলে মনে করে।
* মানুষ কেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাপাচরণে প্রবৃত্ত হয়?
উঃ রজোগুণ থেকে কামের উদ্ভব হয় কামনার অতৃপ্তিতে ক্রোধের উৎপত্তি হয় এইভাবে কামই মানুষকে পাপাচরণে প্রবৃত্ত করায়।
* কাম কিভাবে জীবের চেতনাকে বা জ্ঞানকে আবৃত করে রাখে?
উঃ অগ্নি যেভাবে ধুমের দ্বারা আবৃত থাকে, দর্পণ যেভাবে ময়লার দ্বারা আবৃত থাকে বা গর্ভ যেভাবে জরায়ুর দ্বারা আবৃত থাকে, ঠিক সেভাবে জীবের চেতনা বিভিন্ন মাত্রায় কামের দ্বারা আবৃত থাকে।
* প্রণীদের মধ্যে কামের আশ্রয়স্থল কোথায়?
উঃ কাম প্রাণীদের মধ্যে তাদের ইন্দ্রিয়সমূহ, মন এবং বুদ্ধিকে আশ্রয় করে থাকে।
* স্থুল জড় পদার্থ থেকে আত্মার শ্রেষ্ঠতা ক্রমান্বয়ে বর্ণনা কর।
উঃ স্থুল জড় পদার্থ বা দেহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হচ্ছে ইন্দ্রিয়গুলি, ইন্দ্রিয় থেকে শ্রেষ্ঠ মন, মন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বুদ্ধি এবং বুদ্ধির অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হচ্ছে আত্মা।
* কামকে কিভাবে জয় করা যায়? উঃ নিজেকে জড় ইন্দ্রিয়, মন এবং বুদ্ধির অতীত আত্মা জেনে চিৎ-শক্তির দ্বারা নিকৃষ্ট বৃত্তিকে সংযত করার দ্বারা কামরূপ দুর্জয় শত্রুকে জয় করা যায়। * ভগবদ্গীতার জ্ঞান কিভাবে পরম্পরাক্রমে প্রচলিত ছিল?
উঃ সৃষ্টির প্রারম্ভে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই জ্ঞান সূর্যদেব বিবস্বানকে দিয়েছিলেন, বিবস্বান মনুকে বলেছিলেন, মনু ইক্ষাকুকে বলেছিলেন-- এইভাবে পরস্পরাক্রমে রাজর্ষিরা এই পরমবিজ্ঞান লাভ করেছিলেন।
* অর্জুনের মধ্যে কি যোগ্যতা ছিল যার ফলে সে ভগবদ্বিজ্ঞানের অতি গুঢ়-রহস্য হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন?
উঃ অর্জুনের প্রধান যোগ্যতা হল-- তিনি ছিলেন ভগবানের ভক্ত ও সখা। তাই তিনি এই রহস্যময় বিজ্ঞান হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন।
* কিছু বৎসর পূর্বে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছে-- তবে শ্রীকৃষ্ণ কি করে সৃষ্টির প্রারম্ভে সূর্যদেব বিবস্বানকে এই জ্ঞান প্রদান করেছিলেন?
উঃ লক্ষ লক্ষ বছর পূর্বে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সূর্যদেব বিবস্বানকে ভগবদ্গীতা জানান, তখন অর্জুনও কোনো অন্যরূপে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ভগবানের সঙ্গে অর্জুনের পার্থক্য হচ্ছে যে অর্জুন তা ভুলে গেছেন কিন্তু ভগবান ভুলেন নি।
* ভগবান 'অজ' অর্থাৎ জন্ম-রহিত, তবে তিনি কিভাবে বারংবার জন্ম গ্রহণ করেন?
উঃ ভগবান তাঁর অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে স্বীয় মায়ার দ্বারা তাঁর আদি চিন্ময়রূপে যুগে যুগে অবতীর্ণ হন। জীব কর্মফল ভোগ করতে বাধ্য হয়ে, নির্দিষ্ট যোনিতে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু ভগবান তাঁর নিজ ইচ্ছায় স্বজ্ঞানে তাঁর চিন্ময়রূপে অবতীর্ণ হন বা আবির্ভূত হন। তাঁর শরীরের সৃষ্টি হয় না বরং তাঁর দিব্য শরীরের এই জগতে আবির্ভাব হয়।
* ভগবান কখন এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন?
উঃ যখন ধর্মের পতন হয় ও অর্ধমের অভুত্থান হয় তখন ভগবান এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন।
* ভগবান কেন অবতীর্ণ হন?
উঃ সাধুদের পরিত্রাণ করবার জন্য, দুস্কৃতদের বিনাশ করবার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপন করবার জন্য ভগবান যুগে যুগে এই ধরাধামে অবতীর্ণ হন।
* যে মানুষদের জড় কামনা বাসনা আছে তারা তাদের অভীষ্ট সাধনের জন্য কার পূজা করেন? উঃ অতি শীঘ্র ফল লাভ করার জন্য সকাম কর্মে আসক্ত মানুষ বিভিন্ন দেব দেবীর উপাসনা থাকেন।
* ভগবান কিসের উপর ভিত্তি করে চার প্রকারের বর্ণ সৃষ্টি করেছেন?
উঃ ভগবান গুণ ও কর্ম অনুসারে মানব সমাজে চারটি বর্ণ বিভাগ সৃষ্টি করেছেন। যারা সত্ত্ব গুণে প্রভাবিত তারা ব্রাক্ষণ, যারা রজোগুণে প্রভাবিত তারা ক্ষত্রিয়, যারা রজো এবং তমোগুণের দ্বারা প্রভাবিত তাঁরা বৈশ্য এবং যারা তমোগুণে বেশী প্রভাবিত তারা শূদ্র।
* তত্ত্বজ্ঞান লাভের উপায় কি? উঃ তত্ত্বজ্ঞান লাভ করতে হলে তাকে এক তত্ত্বদ্রষ্টা সদ্ গুরুর শরণাপন্ন হতে হবে এবং এই প্রকার তত্ত্বদ্রষ্টা গুরুদেবকে বিনম্রচিত্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে এবং অকৃত্রিম সেবায় তাঁকে সন্তুষ্ট করে তাঁর কাছ থেকে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করা যায়।
* যারা শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাদের কি গতি হয়? শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তিরই বা কি গতি?
উঃ শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি চিন্ময় তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেন। সেই দিব্যজ্ঞান লাভ করে তিনি অচিরেই পরাশান্তি প্রাপ্ত হন। কিন্তূ শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তি সংশয়হেতু ভগবদ্ভক্তি লাভ করতে না পেরে বিনষ্ট হন। এই প্রকার সন্ধিগ্ধচিত্ত ব্যক্তি ইহলোক বা পরলোক কোথাও সুখলাভ করতে পারে না।
* সমস্ত জীবের প্রতি যথার্থ পণ্ডিত ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি কিরূপ?
উঃ যথার্থ পণ্ডিত ব্যক্তি বিদ্যাবিনয় সম্পন্ন ব্রহ্মণ, গাভী, হস্তি, কুকুর ও চণ্ডাল সকলের প্রতি সমদর্শী হয়ে থাকেন।
* বুদ্ধিমান বিবেকী ব্যক্তি জড়সুখের প্রতি আগ্রহী নন কেন?
উঃ ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগজনিত যে জড় সুখ-ভোগ তা দুঃখের কারণ বা উৎস। এই জড় সুখভোগের উৎপত্তি হয় এবং লয় হয়। তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তির জড়সুখের দ্বারা প্রীত হন না।
* ভগবদ্গীতায় বর্ণিত শান্তি সূত্রটি কি? উঃ ভগবদ্গীতায় বর্ণিত শান্তি-সূত্রের প্রথমাংশ হ'ল-ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, সমস্ত যজ্ঞ ও তপস্যার ভোক্তা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ, সমস্ত লোকের মহেশ্বর এবং তৃতীয়টি হচ্ছে জগবান শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত জীবের হিতাকাঙ্খী বন্ধু। এই তিনটি বিষয় জানতে পারলে জড় জগতের দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্তিলাভ করে মানুষ যথার্থ শান্তি প্রাপ্ত হতে পারবে।
* যোগারুরুক্ষ এবং যোগারূঢ় অবস্থা কাকে বলে? উঃ ভগবানের সাথে যুক্ত হওয়ার পন্থাকে বলে যোগ। যে যোগরূপ সিঁড়ির সাহায্যে পারমার্থিক তত্ত্বজ্ঞানের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করা যায়, সেই যোগরূপ সিঁড়ির প্রথম সোপানকে যোগারুরুক্ষ অবস্থা বলে (অর্থাৎ যারা আরোহণ করতে ইচ্ছুক) এবং সর্বোচ্চ সোপানকে যোগারূঢ় অবস্থা বলা হয়।
* মন কার বন্ধু এবং কার শত্রুরূপে কাজ করে?
উঃ যে তার মনকে জয় করে নিজের বশীভূত করে রেখেছে তার মন তার পরম বন্ধুরূপে কাজ করে, কিন্তু যে মনকে জয় না করতে পেরে মনের বশীভূত হয়েছে, তার মন শত্রুরূপে কাজ করে।
* যথার্থ যোগারূঢ় ব্যক্তির লক্ষণ কি?
উঃ যে যোগী শাস্ত্রজ্ঞান এবং তত্ত্ব অনুভূতিতে পরিতৃপ্ত, যিনি শীত-উষ্ণ আদি দ্বন্দ্বে নির্বিকার, জিতেন্দ্রিয় এবং মাটি, প্রস্তর ও সুবর্ণে সমদর্শী, তিনি যোগারূঢ় বলে কথিত হ'ন।
* কার পক্ষে যোগী হওয়া সম্ভব নয়?
উঃ যারা অধিক ভোজন করে, নিতান্ত নিরাহারে থাকে, এবং অধিক নিদ্রাপ্রিয় বা নিদ্রাশূন্য তাদের পক্ষে যোগী হওয়া সম্ভব নয়।
*
No comments:
Post a Comment
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.